পরিবারে শিশুকে আমরা সবসময় সর্বোচ্চ যত্নে রাখি। শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাবা-মা অস্থির হয়ে পড়ে। খাবার থেকে শুরু করে শিশুর প্রতিটি অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বাবা-মা। কিন্তু বর্তমানে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা শিশুদের সময় দিতে পারে না। তখনই শিশুদের একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠে মোবাইল ফোন।
কর্মমুখী আমরা খুব সহজেই এখন শিশুর হাতে তুলে দিচ্ছি এই প্রযুক্তি। শিশুর সারাদিন কাটছে বোকাবাক্সে বন্দী থেকে। যার করণে একদিকে যেমন শিশুর মানসিক বিকাশ হচ্ছে না, অন্যদিকে শারীরিক স্বাস্থ্যেরও হচ্ছে অবনতি।
কিছু সচেতন পদক্ষেপই পারে মোবাইল ফোন থেকে শিশুর এই ভয়াবহ অসক্তি থেকে মুক্তি দিতে। কীভাবে শিশুকে ফোন থেকে দূরে রাখবেন তা জানাব এই আয়োজনে_
বাইরে ঘুরতে যাওয়া
খুব ব্যস্ত, অবসরই পাচ্ছেন না। শিশুকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়ারও সময় নেই। কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশে খোলামেলা ও নিরিবিলি পরিবেশ খুব সহায়ক। তাই সময় পেলেই শিশুকে নিয়ে বাইরে ঘুরে আসুন। এতে শিশুর মোবাইল অসক্তি কমবে।
বাগান করা
চার দেয়ালের মাঝে বাগান শব্দটা বেমানান বটে। কিন্তু আপনি ইচ্ছে করলেই ইনডোর প্লান্ট লাগাতে পারেন। আবার ছোট বারান্দায় সুন্দরভাবে মানিয়ে যাবে আপনার পরিপাটি বাগানটিও। এতে পরিবারের শিশু একদিকে যেমন সবুজের কাছাকাছি থাকবে। অন্যদিকে পাবে মোবাইলের গ্রাস থেকে মুক্তি।
ঘরের কাজে ব্যস্ত রাখুন
ঘরের কাজে শিশুকেও যুক্ত রাখুন। বয়স অনুযায়ী শিশুদের কিছু ঘরের কাজ ভাগ করে দিন। বয়স খুব কম হলে তাকে ছোট ছোট কাজগুলো করতে বলুন। যেমন বিছানা গোছানো, খাওয়া শেষে নিজের প্লেট ধোয়া ইত্যাদি। এতে শিশু শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকবে। ডিজিটাল জগতে বুঁদ হয়েও থাকবে না।
শিশুর সামনে মোবাইল ‘না’
মনে রাখবেন শিশুরা সবচেয়ে বেশি অনুকরণ প্রিয়। আপনার প্রতিটি অভ্যাস এবং কার্যবিধি আপনার সন্তান অনুকরণ করবে। তাই শিশুর সামনে ফোন যতটা সম্ভব দূরে রাখুন। আপনি ফোন থেকে দূরে থাকলে আপনার শিশুও ফোন থেকে দূরে থাকবে নিশ্চিত।
ক্রাফটিং
পেইন্টিং, ছবি আঁকা, কাগজ কেটে বোর্ডে লাগানো, ছবি কোলাজ করা, নিজের বেডরুমের দেয়ালে কাগজ দিয়ে নকশা করা এসব কাজে শিশুদের উৎসাহিত করুন। এই ধরনের কাজে শিশু ব্যস্ত থাকলে মোবাইল থেকে দূরে থাকবে। সেই সঙ্গে বাড়বে সৃজনীশক্তিও।
নতুন কিছু লেখা ও পড়া
পাঠ্যবই নয়, সিলেবাসের বাইরের কোনও বই শিশুকে পড়তে দিন। পাশাপাশি শিশুদের নিজের মতো করে লিখতেও উৎসাহিত করুন। হতে পারে শিশু আপনাকে একটা চিঠি কিংবা প্রিয় খেলনাগুলো সম্পর্কে তার ভাবনা লিখে ফেললো। এতে শিশুর বিনোদন জগতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। সেইসঙ্গে বাড়বে লেখালেখির দক্ষতাও।
ধাঁধা
শিশুর সঙ্গে মজার মজার ধাঁধা বলুন। শিশুকে গল্প শোনান। আবার মহৎ ও গুণীজনের জীবনের গল্পও করতে পারেন শিশুর সঙ্গে। তাহলে শিশু নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন হবে। জীবনের আদর্শের মতো করে নিজের জীবন পরিচালনা করতে উৎসাহিত হবে।
ছবির অ্যালবাম
এখন ছবি বলতে সবাই ডিজিটাল ছবিই বুঝি। তবে কিছু বিশেষ মুহূর্তের ছবি প্রিন্ট করে শিশুকেই বলুন, সে যেন তার নিজের মতো করে অ্যালবাম সাজায়। নিশ্চিত থাকুন, মোবাইলে বসে ইউটিউব দেখা বা গেইমস খেলার চেয়ে এ কাজেই সে বেশি আনন্দ পাবে।